ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অবরোধে বিপর্যস্ত গাজার জনগণের পাশে দাঁড়াতে আবারও সমুদ্রপথে রওনা হয়েছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী জোট ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (Freedom Flotilla Coalition - FFC) নতুন নৌবহর।
ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য ও ওষুধে ভরা এই নৌযানগুলো বর্তমানে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার (১৫০ নটিক্যাল মাইল) দূরে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল (৭ অক্টোবর) টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এফএফসি জানায়,
“আমাদের নৌবহর গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই ইসরায়েলি নৌবাহিনী একই অঞ্চলে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ মিশনের নৌযানগুলো আটক করেছিল। নতুন বহরটি সেই এলাকার কাছাকাছিই অবস্থান করছে।”
এফএফসি’র সদস্য সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ব্রেকিং দ্য সিজ অন গাজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে জানিয়েছে,
“আমরা গাজার পথে রয়েছি। অবরুদ্ধ মানুষদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
সূত্র জানায়, এবারের নৌবহরে রয়েছে ৯টি ত্রাণবাহী নৌযান, যেগুলোর প্রতিটিতে করে পাঠানো হচ্ছে খাদ্য, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী। এই মিশনে যুক্ত হয়েছেন ১০০-র বেশি মানবাধিকারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক, যাদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, আইনজীবী ও সাহায্যকর্মীরা।
এর আগে আগস্ট মাসে এফএফসি গাজার উদ্দেশে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি মিশনে ৪৩টি নৌযান পাঠানোর ঘোষণা দেয়।
সেই মিশনে অংশ নিয়েছিলেন ৪৪টি দেশের প্রায় ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবী—যাদের মধ্যে ছিলেন সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা, সংসদ সদস্য, মানবাধিকার আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদরা।
কিন্তু ৩১ আগস্ট স্পেনের একটি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করা সেই মিশনের সব নৌযান ইসরায়েলি নৌবাহিনী আটক করে। ক্রুসহ সব যাত্রীদের ইসরায়েলের বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেককে পরে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলেও, এখনো কয়েকজনকে আটক রেখেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
গ্রেটা থুনবার্গসহ কিছু অংশগ্রহণকারীকে ইতোমধ্যে গ্রিসে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা দেখা দেয়। অনেক দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা একে ‘মানবিক অপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দেয়।
উল্লেখ্য, গত ১৮ বছর ধরে গাজার সমুদ্র উপকূল সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এই দীর্ঘ অবরোধের কারণে কোনো আন্তর্জাতিক নৌযান গাজা বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না।
যদি ফ্লোটিলার নতুন নৌবহরটি নিরাপদে গাজায় পৌঁছায়, তবে তা হবে প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা নৌবহর যা অবরুদ্ধ গাজায় নোঙর করবে — যা ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করবে।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে