বাংলাদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবকে অবাস্তব ও অকার্যকর হিসেবে দেখছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতায় নতুন উচ্চকক্ষ গঠন নয়, বরং বর্তমান এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থাকেই আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করাই প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে এই মত প্রকাশ করেন সিপিডির গবেষকরা।
‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?’— এই শীর্ষক সংলাপে অংশ নিয়ে তারা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হলে বাস্তবসম্মত ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক সময়ে সংসদীয় জবাবদিহি ও রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে করা গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর নিজাম আহমেদ।
গবেষণা শেষে সিপিডি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঐকমত্য কমিশনকে আহ্বান জানায়, যেন তারা ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন’-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেয়।
সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, বাইক্যামেরাল সংসদ, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বা নিয়োগ কমিটি গঠন— এসব ধারণা নীতিগতভাবে আকর্ষণীয় হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় কার্যকর নয়।
দলীয় আনুগত্য, পৃষ্ঠপোষকতা ও ‘বিজয়ী সব পায়’ সংস্কৃতির কারণে এসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবে প্রতীকী রূপেই থেকে যায়। বরং এতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় বলে মনে করে সিপিডি।
গবেষণায় আরও বলা হয়, কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ছাড়া শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জবাবদিহি আনতে পারবে না।
তাই নতুন উচ্চকক্ষ গঠনের পরিবর্তে বিদ্যমান সংসদকেই কার্যকর করার দিকেই জোর দেওয়া উচিত।
সংসদীয় ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করতে সিপিডি কয়েকটি বাস্তবধর্মী পরামর্শ দিয়েছে, যেমনঃ
সিপিডির মতে, নির্বাহী ক্ষমতা যাতে ভারসাম্যপূর্ণ থাকে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকা উচিত, তবে এসব নিয়োগ সংসদীয় পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ রাখতে হবে।
এছাড়া গবেষণায় প্রস্তাব করা হয়, আইন প্রণয়ন ও সংশোধনের আগে-পরে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে প্রস্তাবিত এই কমিশনের নাম হতে পারে
“গণতন্ত্র, আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও সংসদীয় কমিশন (DLEPC)।”
এই কমিশন সংবিধান, প্রশাসনিক নীতি, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং স্থানীয় সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে বিকশিত করার কাজ করবে বলে উল্লেখ করা হয় সিপিডির প্রতিবেদনে।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে